বিশ্বের সবচেয়ে খাটো বডিবিল্ডার
হাতের পেশীর গঠনে, শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরানো ব্যায়াম
করার ক্ষেত্রে আর দশজন বডিবিল্ডারের মতোই রোমিও দেব (২৩)। তবে অফিসিয়াল
রেকর্ডে পৃথিবীর আর সব বডিবিল্ডারের চেয়ে আলাদা রোমিও। মাত্র ৮৪
সেন্টিমিটার উচ্চতার রোমিও’র ওজন ১০ কেজি। দেখতে এক বছর বয়সী বাচ্চার মতো
দেখায় তাকে। নিজের ওজন ও উচ্চতা কম হওয়াকে খারাপ না ভেবে সুবিধাই মনে করেন
রোমিও। ভারোত্তলনের জন্য অন্য রকম রেকর্ডের অধিকারী রোমিও বলেন, আমার বয়সের
অন্য সবার মতোই আমি। অনেক ক্ষেত্রে আমার জন্য বাধা থাকলেও প্রকৃত সত্য হলো
আমি একজন ফাইটার। আমি অন্য সবার মতোই সাধারণ জীবনযাপন করতে চাই।
বডিবিল্ডার ছাড়াও আরেকটি গুণ রয়েছে রোমিও’র। খুব ভাল নাচতে পারেন তিনি।
পাঞ্জাবি নাচের তালে তালে নেচে স্থানীয় শহরে প্রচুর সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
বর্তমানে বিশ্ব ভ্রমণে থাকা বডিবিল্ডারকে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন থিয়েটার টিভি
শো’তে। তবে আজকের অবস্থানে আসার জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে রোমিও দেবকে।
বাঁচবেন কিনা এ নিয়ে অনেক শঙ্কায় ছিলেন তার বাবা-মা। ঠিক সময়ের একমাস আগেই
অপরিপক্বভাবে জন্ম নেন তিনি। তখন তার ওজন ছিল মাত্র ৮শ’ গ্রাম। উচ্চতা ছিল
১৫ সেন্টিমিটার। ভারতের পাঞ্জাবে জন্ম নেয়া রোমিও’র বাবা অনিল বলেন, আমরা
অনেক ভীত ও হতাশ ছিলাম তার বিষয়ে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা
তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু কিছুদিন পরে দেখা যায় তিনি
বাড়ছেন না। পরে দেখা যায়, গর্ভে থাকা অবস্থায় তার মাকে মশা কামড়ালে ভাইরাসে
আক্রান্ত হন রোমিও। যার কারণে তার গ্রোথ হরমোন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে
বাসায় কেবল টিভি দেখে কাটছিল তার সময়। ৬ বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি করা হলেও
পড়ালেখা ভাল লাগতো না তার। জীবনে কোন পরীক্ষায়ই পাস করতে পারেননি তিনি। পরে
একসময় রোমিও’র বাবার এক বন্ধু তাদের বাসায় এসে তাকে নাচতে দেখে নিজের
নাচের ক্লাবে যোগ দিতে বলেন। রাজি হয়ে যান রোমিও। কারণ এটা তার খুব ভাল
লাগতো। পরে নাচের পারফরমেন্সের মধ্য দিয়ে স্থানীয় এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা
পান তিনি। এরপর নাচের ফিটনেস ঠিক রাখার জন্য জিমে যাওয়া শুরু করেন রোমিও।
দুই মাস জিমের মালিকের সহায়তায় প্রচুর কষ্ট করে বডিবিল্ডিং শুরু করেন তিনি।
এই অল্প সময়ের মধ্যেই তার শরীর সুন্দর আকার ধারণ করে। পেশি গঠিত হয় এবং
বাহু থাই ইত্যাদি স্ট্রং হয়ে ওঠে। রোমিও বলেন, আমি জিমে যাওয়া পছন্দ করি।
আমি অনেক শক্তি অনুভব করছি। এটা ভাল লাগে আমার। জিম করে এক কিলো ওজন বাড়ায়
রোমিও। তার একাগ্রতা দেখে এই অর্জনের স্বীকৃতির জন্য তার পরিবার
বডিবিল্ডিং-এর বিষয়টি ভারতের লিমা বুক অব রেকর্ডে জানায়। সেখান থেকে ব্যাপক
প্রচার পান তিনি। এবং ২০০৬ সালে গিনেস রেকর্ডের জন্য আবেদন করেন তিনি।
তিনি বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়াসহ অনেক দেশে
ভ্রমণ করেন। সেখানকার টিভি চ্যানেলগুলোকে সাক্ষাৎকার দেন। তাকে নিয়ে এ
পর্যন্ত প্রায় ১২টি ফিল্ম তৈরি হয়েছে বলে জানান তার বাবা অনিল।
No comments:
Post a Comment