Thursday, September 6, 2012

কোরিয়ায় এক বাংলাদেশীর স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্ন

বাংলাদেশের মোশাররফ হোসেন। তার দু’চোখে স্বপ্ন জ্বলজ্বল। সেই স্বপ্নকে সঙ্গী করে তিনি ২০০৯ সালের ৩রা নভেম্বর কোরিয়া পাড়ি জমিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল কিছু টাকা উপার্জন করে দেশে ফিরে সুখের সংসার পাতবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন ধূলিসাৎ। এখন তার জীবনই তার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঋণের ওপর নির্ভর করে চলছে তার দিন। এর কারণ, তার দু’পায়ে হাড়ে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়ায় তা প্রতিস্থাপন করতে হয়েছে। নিতম্বেও একই অপারেশন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ঠিকমতো আর কখনও হাঁটতে পারবেন না। তাই তার সময় কাটে এখন অনাগত ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে এক দুশ্চিন্তার মহাসমুদ্রে ডুবে থেকে। যখনই ভাবেন আর কোনদিন কাজ করতে পারবেন না তখনই ঋণের কথা মাথায় আসে। বাড়িতে রেখে যাওয়া স্বজনের কথা মাথায় আসে। আর তখনই মোশাররফ হোসেন অস্থির হয়ে পড়েন। ই-৯ ভিসা নিয়ে তিনি দক্ষিণ কোরিয়াতে গিয়েছিলেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। চিকিৎসকরা তাকে বলেছেন, তাকে এখন পায়ে ও নিতম্বে যে হাড় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তা ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ফের প্রতিস্থাপন করাতে হবে। সিউল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স সেন্টারে এখন দিন কাটে তার। এই এনজিওতে তিনি ঠাঁই পেয়েছেন। তারাই এখন মোশাররফ হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে ধরনা দিচ্ছে। এ খবর প্রকাশিত হয়েছে কোরিয়া টাইমসে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন মোশাররফ হোসেন। তারপর তিনি বইয়ের একটি ছোট্ট দোকান চালাতেন। তাতে মাসে ৩০০ ডলারের মতো আয় হতো। তা দিয়ে তিনি পরিবারের খরচ নির্বাহ করতে পারতেন মোটামুটি। তিনি বলেছেন, আমিই সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। আমার মেয়ে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। ফলে আমার সামনে অনেক সমস্যা এসে ভর করতে থাকে। মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিৎসার দায় এসে পড়ে আমার কাঁধে। এরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার বন্ধুদের পরামর্শে কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ পেয়ে যান। মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাকে বলা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে অনেকটা আয়েশে থাকতে পারবো। কিন্তু কোরিয়াতে বেতন বেশি। কারণ, সেখানে প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন। সিউল বাংলাদেশীদের কাছে একটি প্রিয় জায়গা। আমাকে কোরিয়া আসতে আমার স্ত্রীও উৎসাহিত করে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমানে ই-৯ ভিসায় কোরিয়াতে প্রায় ৩০০০ বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন। এই কোরিয়াতে পা রাখার পর মোশাররফ হোসেন উজেংবু এলাকায় একটি টেক্সটাইল কারখানায় কাজ পান। তীব্র খাটুনিতে ক্লান্ত শরীরকে একটু ফুরসত নিতে সেখানে সারা দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা বিরতি দেয়া হতো। মোশাররফ বলেন, কোন বিরতিহীন আমাকে ভারি ভারি বক্স তুলতে হতো। কিন্তু আমি তো অর্থ উপার্জনের জন্য এসেছি। তাই মুখ বুজে সহ্য করেছি সব। কোরিয়াতে প্রায় এক বছর অবস্থান করার পর তিনি পায়ে ব্যথা অনুভব করতে থাকেন। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি একজন চিকিৎসকের কাছে যান। কারণ, তখন তিনি আর দাঁড়াতে পারছিলেন না। রাফায়েল ক্লিনিকের সহায়তায় তাকে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়। এখন তার অবস্থা খুবই শোচনীয়। তিনি বাড়ি ফিরতে চান। যদি কোন ব্যক্তি তাকে সহায়তা করতে চান তাহলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে বাবো নানুম (ফুলস শেয়ারিং) ফাউন্ডেশনের সঙ্গে (০২) ৭২৭-২৫০৩ থেকে ৮ পর্যন্ত নম্বরে অথবা ওই ফাউন্ডেশনের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর - ১০০৫-১০২-১০৬৪৩৪,  Woori Bank তে।

No comments:

Post a Comment