Thursday, September 6, 2012

মিশরে ভয়াবহ যৌন নিপীড়ন

মিশরে এখন নারীদেরকে যৌন হয়রানি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। মিশরের নারীরা এখন একাকী বা নারীসহযোগীদের সঙ্গে বাড়ির বাইরে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। মিশরের নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন যৌন হয়রানির সমস্যাটা এখন মহামারী আকারই ধারণ করেছে। গত তিন মাসে সেখানে এ ধরনের  সমস্যা বেড়ে গেছে বলে তারা দাবি করছেন।  মিশরের অনেক নারীর মতেই যৌন হয়রানির বিষয়টি মিশরে এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের হয়রানির ঘটনা কখনও কখনও চরম আকার ধারণ করে সহিংস হামলার রূপ ধারণ করে। বিবিসি জানিয়েছে গত শীতে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়াতে একজন নারী একদল পুরুষের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে ওই নারীকে কয়েকজন পুরুষ টেনে কাঁধে তুলে নিচ্ছে এবং অন্যরা তাকে টেনেহিঁচড়ে নামাচ্ছে। জনতার হৈচৈয়ের মধ্যে হামলার শিকার ওই নারীর চিৎকার চাপা পড়ে যাচ্ছে। অবস্থা দেখে কোন ভাবেই বোঝার উপায় নেই যে, কে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে আর কে তার ওপর হামলে পড়ছে। এটি নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের চরম অবস্থা হলেও সমীক্ষায় দেখা গেছে, মিশরের প্রত্যেক নারীই প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মারওয়া নামের এক তরুণী বলেছেন, বাড়ির বাইরে গেলে তিনি শারীরিক বা মৌখিক ভাবে নিপীড়নের শিকার হন। তিনি বলেছেন, এ কারণে সব সময় তিনি ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। মারওয়া বলেন, একজন নারী হিসেবে সব সময়ই এ বিষয়টি আমাকে আতঙ্কে রাখে। যখনই আমি বাড়ির বাইরে যাই, রাস্তায় হাঁটি তখনই কেউ না কেউ আমাকে নিপীড়ন বা বিরক্ত করবে। এ কারণে সব সময়ই আমি ভয়ে থাকি। এ কারণ আমি বাড়ির বাইরে বের হওয়া কমিয়ে দিয়েছি। পোশাক পরার ক্ষেত্রে আমি এখন অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করি। মানুষকে আকর্ষিত করতে পারে এমন ধরনের কাপড় পরা আমি এড়িয়ে চলি। বাড়ির বাইরে ছেলেদের হয়রানি এড়াতে মিশরের নারীরা ঢিলেঢালা পোশাকের পাশাপাশি মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার করছেন। কিন্তু মিশরের নারী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠন ইজিপ্ট’স গার্লস আর এ রেড লাইন-এর দীনা ফরিদ বলেছেন এ ধরনের রক্ষণশীল পোশাকও তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না। তিনি বলেছেন চেহারা আড়াল করতে যারা হিজাব ব্যবহার করছেন তারাও যৌন হয়রানির টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। আসলে রক্ষণশীল পোশাক যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কোন ভূমিকাই রাখছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ মিশরের বেশির ভাগ নারীই পর্দা ব্যবহার করেন। অথচ তারা প্রতিনিয়তই যৌন হযরানির শিকার হচ্ছেন। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যেসব নারী বা তরুণী যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই নিকাব দিয়ে নিজেদেরকে আড়াল করে রেখেছিলেন। ২০০৮ সালে ইজিপ্টশিয়ান সেন্টার ফর উইমেন’স রাইট পরিচালিত এক সমীক্ষাতে দেখা গেছে ৮০ ভাগ নারীই কোন না কোন ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর এ ধরনের হয়রানির শিকার অধিকাংশ নারীই ইসলামিক অনুশাসন মেনে হিজাব পরিধান করছেন। কায়রোর আমেরিকান ইউনিভার্সির একজন সমাজবিজ্ঞানি সাঈদ সাদেক বলেছেন মিশরের সমাজের গভীরেই এ সমস্যার মূল গ্রোথিত রয়েছে। তিনি বলেছেন, এর মূলে রয়েছে ইসলামিক রক্ষণশীলতার মনোভাব এবং পিতৃতান্ত্রিক আচরণের সংমিশ্রণ। তিনি বলেন, ইসলামী মৌলবাদের উত্তান ঘটছে আর তারা এখন নারীদেরকেই তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছেন। তারা চাইছেন নারীরা ঘরেই বসে থাক। বাইরে কাজ করার জন্য তারা যেন বের না হন। তিনি বলেন পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি নারীদেরকে পুরুষদের চেয়ে উঁচু স্থানে থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না। কারণ, কিছু কিছু নারী নিজেদের শিক্ষা-কর্মদক্ষতা আর যোগ্যতার বলে পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে নারীদের দমিয়ে রাখার উপায় হচ্ছে যে কোন ভাবে তাদের ওপর যৌন হয়রানি করা। সাদেক বলেন এটা ফারাওদের সংস্কৃতি নয়। এটা বেদুঈনদের সংস্কৃতি। সাঈদ সাদেক এবং নারী অধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের প্রবণতা বৃদ্ধির পেছনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্বলতাকেও দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে নারীদের পোশাকের জন্য তাদেরকে নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। আর এ নিপীড়নকারীদের মধ্যে টিনেজারদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীদের নিপীড়নের ব্যাপারে কায়রোর একদল টিনেজার জানিয়েছেন নারীরাই তাদেরকে নিপীড়ন করতে ছেলেদেরকে প্রলুব্ধ করে। তারা বলেছে মেয়েরা যদি সম্মানজনক ভাবে পোশাক পরে তাহলে কেউই তাদেরকে বিরক্ত করবে না। নারীরাই চাইছে তাদেরকে বিরক্ত করা হোক। এমনকি নিকাব পরা মেয়েরাও নিজেদের পেছনে ছেলেদের ঘোরাতে পছন্দ করে। এজন্য অবশ্য ছেলেদেরকে পুরোপুরি দোষারোপ করা যায় না। কারণ, টাইট জিন্স পরে নেকাব ব্যবহারকারী নারী আর শালীন পোশাকের সঙ্গে হিজাব ব্যবহারকারী নারীদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যে নারীরা টাইট জিন্স পরে আবার নেকাব ব্যবহার করে তাদের তো হয়রানি প্রাপ্যই বলা চলে। মিশর সরকার অবশ্য এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার কথা জানিয়েছে। তবে নারী অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলো দাবি করেছে সরকার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে না। তবে সচেতন নারীদের অনেকেই এ বিষয়টিকে তাদের স্বাধীনতার পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন। মিশরের একজন নারী যেমন বলছিলেন আমি নিরাপদে একজন মানুষ হিসেবে রাস্তায় হাঁটতে চাই। আমাকে যেন কেউ বিব্রত বা হয়রানি করতে না পারে। এটাই হচ্ছে আমার স্বাধীনতা।

No comments:

Post a Comment