Tuesday, October 2, 2012

বিদ্রোহী নয়, সারকোজির নির্দেশেই ফরাসি গুপ্তচরের হাতে খুন হয়েছেন গাদ্দাফি




প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির সরাসরি নির্দেশে ফরাসি এক গুপ্তচরের হাতেই লিবিয়ার সাবেক নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি খুন হয়েছেন। গাদ্দাফি বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহীদের হাতে ধরা পড়ার পর ওই ফরাসি গুপ্তচর বিদ্রোহীর বেশে গাদ্দাফির মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে বলে এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ফ্রান্সকে এ কাজে সফল হতে সহায়তা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক প্রেসিডেন্ট সিরিয়ার বাশার আল আসাদ। ত্রিপোলিতে সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বৃটেনের টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে জানিয়েছেন নিজেকে রক্ষার উদ্দেশ্যেই আসাদ এক সময়ের লৌহমানব খ্যাত গাদ্দাফির তথ্য ফ্রান্সের কাছে ফাঁস করেছেন। সিরিয়ার সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত স্যাটেলাইট ফোনের নম্বর শনাক্ত করার মাধ্যমেই ফ্রান্স গাদ্দাফিকে শনাক্ত করেছিল। লিবিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা রামি আল ওবাইদি বলেছেন, সিরিয়ার সহিংসতার কারণে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের মনোযোগ লিবিয়া থেকে সিরিয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছিল বলে আসাদ প্যারিসকে গাদ্দাফির ফোন নম্বর দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। বিনিময়ে তিনি চেয়েছিলেন ফ্রান্স যেন দামেস্কের ওপর চাপ শিথিল করে। ওবাইদি বলেছেন, ওই তথ্যের বিনিময়ে আসাদ ফ্রান্সের কাছ থেকে দামেস্কের ওপর চাপ না দেয়ার প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিলেন। ওবাইদির দাবি অবশ্য নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে লিবিয়াতে ন্যাটোর নেতৃত্বে বোমা হামলা এবং আসাদ প্রশাসনের ওপর আন্তর্জাতিক চাপের ব্যাপারে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। এদিকে লিবিয়ার অস্থায়ী সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে লিবিয়ার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান মাহমুদ জিবরিল সমপ্রতি দাবি করেন মিশরের এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন বিদেশী গুপ্তচরের অভিযানের ফলেই গাদ্দাফি নিহত হয়েছিলেন। তার এ ধরনের বক্তব্য দেয়ার পরপরই গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলনের সময় বিদেশী গোয়েন্দা বিভাগের সাবেক প্রধান আল ওবাইদি তাতে ফরাসি প্রেসিডেন্টের নির্দেশের কথা জানালেন। মাহমুদ জিবরিল অবশ্য কোন দেশের নাম উল্লেখ করেননি। তবে ইতালিয়ার কুরিয়ার ডেলা সেরা পত্রিকা ত্রিপোলিস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে গাদ্দাফির হত্যাকাণ্ডে যদি বিদেশী গোয়েন্দারা সম্পৃক্ত থাকেন তাহলে সেটা নিশ্চিত ভাবেই ফরাসি গোয়েন্দা। ন্যাটো জোটের আনুষ্ঠানিক ভাষ্য মোতাবেক রয়েল এয়ারফোর্সের একটি শনাক্তকারী বিমান বড় একটি গাড়ি বহরকে গত বছর ২০শে অক্টোবর সির্তে থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বলে চিহ্নিত করে। ওই গাড়ি বহরে কারা আছে সেটা নিশ্চিত না হয়েই ন্যাটোর বোমারু বিমান বোমা হামলা চালায়। এরপর মিলিশিয়া যোদ্ধারা গাদ্দাফিকে  মিসরাতাগামী একটি পাইপলাইনের ভেতর থেকে আটক করে। তবে আল ওবাইদি বলছেন, ফ্রান্সই প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনা করেছিল। তারা যেখানে গাদ্দাফির গাড়ি বহরকে চিহ্নিত করেছিল সেখানেই লিবিয়ার মিলিশিয়াদেরকে অ্যাম্বুশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। গাদ্দাফি ধরা পরার পর তার সঙ্গে কেমন আচরণ করা হবে সেটা নিয়ে ফরাসি সরকারের কোন মাথা ব্যথা ছিল না বলে আল ওবাইদি দাবি করেছেন। ফরাসি গুপ্তচররাই গাদ্দাফিকে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে তিনি জোর দিয়ে উল্লেখ করেন। আল ওবাইদি বলেন, ফরাসি গোয়েন্দারা গাদ্দাফির ইরিদিয়াম স্যাটেলাইট ফোনের ওপর নজর রাখছিল। গাদ্দাফি সিরিয়ায় ফিলিস্তিনি মিলিশিয়া নেতা আহমেদ জিবরিল এবং তার বিশ্বস্ত ইউসুফ শাকিরকে ফোন করার পর ফরাসি গোয়েন্দারা গাদ্দাফির অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপরই তারা গাদ্দাফির গতিবিধির ওপর কড়া নজরদারি করতে শুরু করেন। এটা ফ্রান্সের বিশেষ অভিযান হওয়ার কারণে এ ব্যাপারে সির্তে অবস্থানকারী তুর্কি এবং বৃটিশ সামরিক গোয়েন্দাদেরকে আগে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেননি। কুরিয়ার ডেলা সেরা পত্রিকা পশ্চিমা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, গাদ্দাফিকে হত্যায় ফরাসি অভিযানের অন্যতম কারণ হচ্ছে তৎকালীন ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সরকোজি নিজেই গাদ্দাফিকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন। এতে বলা হয়েছে ২০০৭ সালে সারকোজির নির্বাচনে গাদ্দাফি যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছিলেন সেটা বিস্তারিত প্রকাশ করার হুমকির কারণেই গাদ্দাফির ওপর ক্ষিপ্ত হন সারকোজি। তাই যত দ্রুত সম্ভব গাদ্দাফির মতো ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করার সারকোজির যথেষ্ট কারণ ছিল। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের অভিযোগ স্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

No comments:

Post a Comment