Wednesday, October 3, 2012

আমস্টার্ডামে দু’বোনের অর্ধ শতকের নিষিদ্ধ জীবন

লুইস ও মারটিন ফক্কেন (৭০)। যমজ বোন। চেহারায় ছিল লাবণ্য। আর তারই গুণে দু’জনেই বেছে নেন পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা পেশা। এর নাম দেহ ব্যবসা। লুইস ও মারটিন ফক্কেনকে বলা হয় নেদারল্যান্ডসের আমস্টার্ডামের সবচেয়ে বয়সী বা প্রবীণ দেহ ব্যবসায়ী নারী। জীবনের এতটা সময় তারা অর্থের বিনিময়ে পুরুষদের আনন্দ দিয়ে এলেও জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তাদের একজন অবসরে গিয়েছেন। তার নাম লুইস ফক্কেন। তিনি এখন থেকে দু’বছর আগে এ পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। কারণ, আরথ্রাইটিস তাকে অনেকটাই অচল করে দিয়েছে। তিনি আর খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে পারছিলেন না। তবে মারটিন ফক্কেন এখনও উপার্জন অব্যাহত রাখার জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন পুরনো পেশা। তারা দু’জনই এ পেশা শুরু করেছিলেন ২০ বছর বয়স থেকে, যখন শরীরে ছিল টলটলায়মান যৌবন। সেই থেকে গত অর্ধ শতাব্দী সময় তারা নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট বা নিষিদ্ধ পল্লীতে কাটিয়ে দিয়েছেন। এখন ৭০ বছর বয়সে এসে তারা সেখানে সবচেয়ে বয়সী পতিতা। এজন্য তাদেরকে বলা হয় সবচেয়ে অভিজ্ঞ। তাদেরকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে একটি প্রামাণ্যচিত্র। তাতে তারা ওই নিষিদ্ধ পল্লীতে তাদের ৫০ বছরের নানা উত্থান-পতন, সুখ-দুঃখের কথা খুলে বলেছেন। ওই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন গাব্রিয়েল প্রোভাস ও রব শ্রোয়েডার। এতে তারা বলেছেন, কিভাবে এ পেশায় তাদের প্রবেশ তা নিয়ে। তারা ১৯৬০ এর দশকের শুরুর দিকে যখন এ পেশা শুরু করেছিলেন তারপর থেকে সবকিছু কিভাবে বদলে গেছে, তাদের এ পেশা নিয়ে জনগণ কি মনে করে এসব নিয়ে কথা বলেছেন। ওই প্রামাণ্যচিত্রে লুইসকে বলতে শোনা যায়- আমরা কত কৌশল জানি তা তোমাদের বলব না। আমাদের কৌশল অগণিত। দেহ ব্যবসার প্রথম দিনগুলোর সঙ্গে তারা বর্তমান সময়ের তুলনা করে বলেন, আগের দিনে অনেকটা রয়ে সয়ে ব্যবসা করতে হতো। কিন্তু এখন খোলা ময়দান। কোন রাখঢাক নেই। তাদেরকে প্রথমে এ পথে নামায় দালাল চক্র। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাদেরকে। কিন্তু তারা সেই চক্রের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এখন নিজেরাই ব্যবসা পেতেছেন। তারা দেহ ব্যবসায় নিয়োজিতদের জন্য প্রথম অনানুষ্ঠানিক দেহ ব্যবসার ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাদের বয়স এখন ৭০। কিন্তু চোখেমুখে লাবণ্যময় হাসি মুছে যায়নি। তাদের চাহনিতে এখনও নির্যাতন, সহিংসতা ও তাদেরকে দিয়ে অসামাজিক কাজ করানোর স্মৃতি যেন খেলে যায়। এ ব্যবসায় নামার আগে লুইসের বিয়ে হয়েছিল। তিনি ৩ সন্তানের মা হয়েছিলেন। কিন্তু তার স্বামী তাকে অতিরিক্ত অর্থ আয় করার জন্য তাকে রাস্তায় ঠেলে দেয়। সেই প্রথম রাজপথ বেছে নেন তিনি। লুইস বলেন, আমি তখন ২০ পেরুনো যুবতী। একদিন আমাকে আমার স্বামী প্রহার করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। আমাকে অর্থ উপার্জন করে তবেই বাসায় ফিরতে বলে। হুমকি দেয়, যদি তা করতে না পারি তাহলে সে আমাকে ত্যাগ করবে। আমার সন্তান ছিল। তাদের ও আমার স্বামীকে আমি ভালবাসতাম। সেই ভালবাসার জন্যই আমি এ পথে নামতে বাধ্য হয়েছি। আমি আমস্টার্ডামের একটি পতিতালয়ে কাজ পেয়ে যাই। ওদিকে মারটিন ফক্কেন ৪র্থ সন্তানের জন্ম দেয়ার পরে ক্লিনারের চাকরি নেন। কিন্তু পুরুষরা তার শরীরের দিকে নজর দিতে থাকে। তাকে নানা রকম প্রস্তাব দেয়। তিনি তার বোন লুইসের কথা মাথায় রেখে ভাবতে বসেন। দেখেন ওই পথেই বেশি অর্থ কামানো সম্ভব। তারপর থেকে শুরু। দু’বোনে এক সঙ্গে শুরু করেন ব্যবসা। কিন্তু ২০০০ সালে সেখানে কোন দেহ ব্যবসা চালানো নিয়ে একটি আইন হয়। এতে এ ব্যবসায় যারা নিয়োজিত তাদের মাঝে নেমে আসে আতঙ্ক। তারা দাবি করেন, ওই আইনটি করার ফলে তাদের ব্যবসায় অপরাধী চক্র ঢুকে পড়েছে। এ কারণে তাদের গড় আয় কমে গেছে।

No comments:

Post a Comment