
সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ার ফেসবুকের
প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জোকারবার্গ হঠাৎ বিয়ে করে সারপ্রাইজ দিয়েছেন তার
বন্ধুমহলকে। একই সঙ্গে বিশ্ব মিডিয়া আলোচনায় স্থান করে নিয়েছে
জোকারবার্গ-প্রিসিলা জুটি। তারা এখন হানিমুন করতে রয়েছেন ইতালিতে। সেখানে
তাদেরকে দেখা গেছে ইয়াট ভাড়া করে তাতে নীল পানির ওপর আনন্দ করতে।
দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে বিয়ে করে এখন যেন আনন্দের হাওয়ায় ভাসছেন জোকারবার্গ।
তার খুশির কোন সীমা নেই। তবে এ পর্যায়ে আসতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে
প্রিসিলা চ্যানকে। করতে হয়েছে অনেক সংগ্রাম। চায়নিজ বাবা ও ভিয়েতনামি মায়ের
সন্তান প্রিসিলা চ্যানের আমেরিকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাটা ছিল অনেক
কষ্টের। এক্ষেত্রে তার বাবা-মাও অনেক সংগ্রাম করেছেন মেয়েকে প্রতিষ্ঠিত
করতে। প্রিসিলার বাবা ডেনিশ চ্যান (৪৭) ছিলেন একটি শরণার্থী ক্যাম্পে।
সেখান থেকে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ১৯৭০ সালে। স্বপ্নের
বাস্তবায়ন করতে ডেনিশ চ্যান দৈনিক ১৮ ঘণ্টা করে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন।
নিজের প্রথম সন্তান প্রিসিলার মার্কিন স্বপ্নপূরণ করতে অনেক কষ্টে সেখানে
একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্ট খোলেন। একই উদ্দেশে প্রিসিলার মা ইভো নিও দৈনিক
অনেক সময় কাজ করতেন বোস্টনের টেস্টি অব এশিয়াতে। ফলে প্রিসিলাকে থাকতে হতো
তার দাদীর সঙ্গে। তার চায়নিজ দাদী আবার কোন ইংরেজি জানতেন না। প্রিসিলার
জীবনে তার দাদীর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। তিনিই ছিলেন তার মানসিক সাপোর্ট। সব
কাজের সহায়ক শক্তি ও প্রেরণা। প্রিসিলাকে ভর্তি করা হয় বোস্টনের পাশের
শ্রমজীবী শ্রেণীর শহর কুইন্সির রাষ্ট্রচালিত কুইন্সি হাইস্কুলে। খুব ছোট
বয়সেই তার মেধা ও অধ্যবসায় পরিস্ফূটিত হয়ে ওঠে। প্রিসিলার সায়েন্স শিক্ষক ও
টেনিস কোচ পিটার সোয়ানসন বলেন, ১৩ বছর বয়সে সে আমাকে বলেছিল, হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে আমাকে কি করতে হবে? সোয়ানসন ডেইলি মেইলকে বলেছেন,
আমার শিক্ষকতা জীবনে এতটুকু বয়সে এমন প্রশ্ন আমাকে খুব কমই করেছে কেউ।
প্রিসিলা জানতো সে কি চায়। এমনকি ১ ভাগ সম্ভাবনাকেও হাতছাড়া করেনি সে। সে
জানতো হার্ভার্ড ছাড়া পড়তে হলে তার বায়োডাটা ভারি থাকতে হবে। এজন্য ১ ভাগ
রিকোয়্যারমেন্ট অর্জন করতে টেনিসে যোগ দেন প্রিসিলা। খুব বেশি পড়াশোনা
করতেন তিনি। এজন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে সব সময় ছিল সে প্রস্তুত। তিনি
বলেন, একরার প্রিসিলা তাকে তাদের রেস্টুরেন্টে ফ্রি খাওয়ার একটি ভাউচার
উপহার দেয়। ফলে তিনি তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার সংগ্রাম
সম্পর্কে ধারণা পান। হার্ভার্ডের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী ছিলেন প্রিসিলা
এজন্য ভার্সিটিকে আকৃষ্ট করতে সব কিছুই করেন তিনি। যখন সে হার্ভার্ডে ভর্তি
হয় তারপর আমাকে মুচকি হেসে এসে কানে কানে বলেছিল আমি আপনাকে বলেছিলাম আমি
হার্ভার্ডে পড়বো বলেছেন সোয়ানসন। তিনি জানান, গত বছর প্রিসিলা ও তার
বর্তমান স্বামী জোকারবার্গকে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া তাদের
তিন কোটি ৫০ লাখ ডলারের ফ্ল্যাটে। তখন মার্ক জোকারবার্গ কিচেনে ছিলেন। তিনি
তার কম্পিউটারে কাজ করছিলেন। প্রিসিলা পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর মুচকি হেসে
তিনি বলেছেন, সব গ্রেটম্যানের পেছনে একজন গ্রেটওমেন থাকেন। সোয়ানসন বলেন,
সবাই বলে জোকারবার্গকে বিয়ে করে প্রিসিলা লাকি। কিন্তু জোকারবার্গ জানেন
আসলে প্রিসিলাকে পেয়ে তিনি লাকি। তিনি বলেন, প্রিসিলা হলেন মার্কিন
স্বপ্নের সর্বশেষ উদাহরণ। তার বাবা-মা কিছুই না নিয়েই এখানে এসেছিলেন। আর
এখন তিনি নিজ চেষ্টায় বিলিয়নিয়ার হওয়া সবচেয়ে কম বয়সীর স্ত্রী। এর থেকে ভাল
আর কি হতে পারে। প্রিসিলা তার পরিবারের শিকড়ের সম্মান রক্ষা করেছেন। তার
অফিসিয়াল বায়োগ্রাফিতে উল্লেখ আছে কুইন্সি হাইস্কুল থেকে তিনি হার্ভার্ড
বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োলজি নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে এক পার্টিতে বাথরুমের
লাইনে তার জোকারবার্গের সঙ্গে পরিচয় ২০০৩ সালে। সম্প্রতি প্রিসিলা
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক্তারিতে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন।
ভবিষ্যতে শিশু রোগের ডাক্তার হতে চান তিনি।